প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
|
![]() |
রাধিকা সগর্বে সবিনয়ে কহিলেন, তোমারই অন্তরের ভাব আমি বাহিরে প্রত্যক্ষ বিরাজমান।–
ভাণ্ডীরবনবিহারীর সাজ সম্পূর্ণ হইল; সুবলের হাতের কাজ সমাধা হইয়া গেল।
ইহার মধ্যে বিশেষ করিয়া বাংলার গ্রামদৃশ্য গৃহচিত্র কিছুই নাই। গোয়ালিনীরা যেরূপ সাজে নূপুর-কিংকিণী বাজাইয়া দধি-মাথায় বাছুর-কোলে বনপথ দিয়া চলিয়াছে তাহা বাংলার গ্রামপথে প্রত্যহ, অথবা কদাচিৎ, দেখিতে পাওয়া যায় না। রাখালেরা মাঠের মধ্যে বটচ্ছায়ায় অনেকরকম খেলা করে, কিন্তু ফুল লইয়া তাহাদের ও তাহাদিগকে লইয়া ফুলের এমন মাতামাতি শুনা যায় না। এ-সমস্ত ভাবের সৃষ্টি। কৃষ্ণরাধার বিরহ-মিলন সমস্ত বিশ্ববাসীর বিরহ-মিলনের আদর্শ; ইহার মধ্যে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মণসমাজ বা মনুসংহিতা নাই, ইহার আগাগোড়া রাখালি কাণ্ড। যেখানে সমাজ বলবান্ সেখানে বৃন্দাবনের গোচারণের সঙ্গে মথুরার রাজ্যপালনের একাকার হওয়া অত্যন্ত অসংগত। কিন্তু কৃষ্ণ-রাধার কাহিনী যে ভাবলোকে বিরাজ করিতেছে সেখানে ইহার কোনো কৈফিয়ত আবশ্যক করে না। এমন-কি, সেখানে চিরপ্রচলিত সমস্ত সমাজপ্রথাকে অতিক্রম করিয়া বৃন্দাবনের রাখালবৃত্তি মথুরার রাজত্ব অপেক্ষা অধিকতর গৌরবজনক বলিয়া সপ্রমাণ হইয়াছে। আমাদের দেশে, যেখানে কর্মবিভাগ শাস্ত্রশাসন এবং সামাজিক উচ্চনীচতার ভাব সাধারণের মনে এমন দৃঢ়বদ্ধমূল সেখানে কৃষ্ণরাধার কাহিনীতে এইপ্রকার আচারবিরুদ্ধ বন্ধনবিহীন ভাবের স্বাধীনতা যে কত বিস্ময়কর তাহা চিরাভ্যাসক্রমে আমরা অনুভব করি না।
কৃষ্ণ মথুরায় রাজত্ব করিতে গেলে রাধিকা কাঁদিয়া কহিলেন–
রাজাকে পুনরায় রাখাল করিবার আশা দুরাশা, এ কথা সকলকেই স্বীকার করিতে হইবে। কিন্তু বৃন্দা বৃন্দাবনের আসল কথা বোঝে, সে জানে নিরাশ হইবার কোনো কারণ নাই। সে জানে বৃন্দাবন-মথুরায় কাশী-কাঞ্চীর নিয়ম ঠিক খাটে না।